Saturday 13 April 2013

Torn dress of Ekushey TV reporter Nadia Sharmeen done by Hefajat (Jamaat) Islam









News on Ekushey TV reporter Nadia Sharmeen

ভয় পাওয়ার মেয়ে নই, মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই
হেফাজতী হামলা দমাতে পারেনি নাদিয়াকে


"""""""""""না, কোন অজপাড়াগাঁ নয়Ñ বাংলাদেশের রাজধানী শহর। ২০১৩ সালের ঢাকা। এই ঢাকার রাজপথে ভরদুপুরে একটি মেয়ে দৌড়োচ্ছে। প্রাণপণে ছুটছে। তার পথ শেষ হচ্ছে না। তাকে পেছন থেকে তাড়া করছে একদল হায়েনা। খুব সহজেই মেয়েটিকে ধরে ফেলছে তারা। পেটাতে পেটাতে রাস্তায় শুইয়ে দিচ্ছে। হাত-পা ছিলে যাচ্ছে মেয়েটির। হাড় গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায়ও সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না। আবারও তাকে মাটিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। ৫০ জনের মতো আক্রমণকারী তার চুলভর্তি মাথা নিয়ে রীতিমতো ফুটবল খেলছে। মেয়েটির নাম নাদিয়া শারমীন। অপরাধ- তিনি মেয়ে। পুরুষের সমাবেশে উপস্থিত হওয়া মেয়ে। তাই তাঁর উপস্থিতি বিরাট ‘গুনাহ’র কাজ বলে বিবেচিত হয়েছে। তাই প্রকাশ্য বিচার। অথচ মেয়ে হিসেবে সেখানে যাননি নাদিয়া। পেশায় তিনি সাংবাদিক। দায়িত্ব পালন করতেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। এর পরও তাঁর ওপর বর্বর আক্রমণ চালানো হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে ডাকা মহাসমাবেশ থেকে এ হামলা চালায় হেফাজতে ইসলাম। যে ধর্ম নারীকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে, সে ধর্ম রক্ষার নামেই রাস্তায় ফেলে নারী পেটায় অন্ধের দল। টেলিভিশনের কল্যাণে সারাদেশের মানুষ দেখেছে এ শয়তানী। কী বীভৎস সে দৃশ্য, কত অমানবিক- তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এর পরও সত্য যে, হেফাজতীরা বুক ফুলিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছে। আর হাসপাতালে স্থান হয়েছে নাদিয়ার। মাথা, বাম পা, বাম পাঁজর, বাম বাহুতে প্রচ- আঘাত নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এখানে অনেক দিন। এর পর বাসায়।
তবে এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। অত্যন্ত প্রাণবন্ত স্বভাবের মেয়েটি এখন জোর করে হাসেন। পেশাগত কারণে এক সময় সারাশহর চষে বেড়িয়েছেন। এখন তার জন্য চার দেয়াল। ঘর থেকে বের হওয়ার অবস্থা নেই। বাম হাঁটুর জোড়ায় চিড় ধরেছে। পায়ে ভর দিয়ে বেশি সময় দাঁড়াতে পারে না। সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না। একই কারণে অফিস বন্ধ। নির্ভীক এই সংবাদকর্মী ঘরে বসে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে কাটান। নিজের সংবাদ হওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, হেফাজতের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য পল্টন মোড় এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেডের পাশে অবস্থান নিয়েছিলাম আমি। বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে লম্বা সাদা আলখেল্লা পরা কয়েকজন আমার দিকে তেড়ে আসে। বলে, তুমি মহিলা মানুষ না? এখানে কি? যাও এখান থেকে। আমি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করি। বলি, আমি মহিলা হিসেবে এখানে আসিনি। টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছি। কিন্তু কিছু শুনতে চায় না তারা। এক পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের ৫০ থেকে ৬০ কর্মী আমাকে আক্রমণ করে বসে। আমি দ্রুত স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করলে তারা পেছন থেকে আমাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। নাদিয়া জানান, বাঁচার জন্য তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্রের মাইক্রোবাসে উঠে পড়েন কিন্তু হেফাজতীরা তাঁকে সেখান থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করে আনে। বেধড়ক পেটায়। নাদিয়া কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। তাঁকে ফেলে দেয়া হয় রাস্তায়। এ সময় আক্রমণকারীরা নাদিয়াকে আঘাত করতে থাকে। বলতে থাকে, আমাদের ১৩ দফা পড়নি? সেখানে মেয়েদের অবাধ চলাফেরা করতে বারণ করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তখন বোঝা হয় নাদিয়ার। সে কালো দিনের কথা আজও ভুলতে পারেননি নাদিয়া। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমি ক্রাইম বিট করি। অনেক প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু সেদিনের নিষ্ঠুরতা ভোলার মতো নয়। আমার মনে হয়েছিল, এরা মানুষ নয়। এরা কোন বণ্য প্রাণী। এর পর নাদিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। বলেন, চিন্তা করতে পারেন, এরা সেই চট্টগ্রাম থেকে এসে একজন নারীকে পিটিয়ে গেছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! নাদিয়া জানান, এখনও তিনি ধকল সামলে উঠতে পারেননি। নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। টেস্টের পর টেস্ট চলছে। আজ এটার। কাল ওটার। বিশেষ করে পা বাঁচাতে হাঁটুতে অপারেশন করা জরুরী। সে প্রস্তুতি চলছে এখন। হ্যাঁ, চিকিৎসা খরচ অনেক। তবে তাঁকে দেখতে আসা মন্ত্রীরা, প্রগতিশীলরা সেদিকে যাননি। ‘অত কথার কী দরকার’ ভাব। আর হেফাজতীদের দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তাই চিকিৎসার খরচ বহন করতে হচ্ছে নিজেকেই। আর দোষীদের বিচার? থানায় মামলা হয়েছে। কোন ধরনের অগ্রগতি নেই। এ প্রসঙ্গে বেদনার সবটুকু প্রকাশ ঘটিয়ে নাদিয়া বলেন, আহত আমি হাসপাতাল থেকে সরাসরি শাহবাগ থানায় গিয়েছি। কিন্তু একটি মামলা নিতে চার ঘণ্টা আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি থানার সোফায় শুয়ে অপেক্ষা করেছি। এর পর মামলা নেয়া হয়েছে। আমি আমার ওপর আক্রমণের ভিডিওফুটেজও দিয়ে এসেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। এমনকি আমাকে একটি ফোনও করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে হতাশার ব্যাপার। খুবই হতাশার।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, নাদিয়াকে দেখে সেটি মনে হয় না একদম। বরং ভীষণ আত্মবিশ্বাসী আর সাহসী মেয়েটি। এত বড় একটি ঘটনার যে শিকার সেই মেয়ে অবলীলায় ঘোষণা করেন- আমি ভয় পাওয়ার মেয়ে নই। ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমাদের ঘরে বন্দী করে রাখতে চায়। সেটা হবে না। একটু সুস্থ হলে আমি আবারও সমাবেশ কাভার করতে যাব। বার বার যাব। আমাকে মেরে ফেলবে? মারুক। আবারও আমি নিজের মতো হেসেখেলে বেড়াব। মেয়ে নয়, মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই আমি। কথাগুলো বলার সময় চোখে জল ছল ছল করে ওঠে তাঁর। এই জল শুকোবার আগেই আজ রবিবার আবারও ঢাকায় আসছে আক্রমণকারীরা। আবারও সমাবেশ। আবারও ইসলাম রক্ষার দোকানদারি। এবার নারীদের কী সবক দেবে এসব ভ-? তার চেয়ে জরুরী প্রশ্ন, সেই সবকের ধার কি ধারবে বাংলার নারী? আমরা জানিÑ না। ধারবে না। বরং বার বার জেগে উঠেছে নারী। রুখে দাঁড়িয়েছে। আবারও জাগবে। জাগো, জাগো নারী বহ্নিশিখা।""""""
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2013-05-05&ni=134308

....................................................................................

No progress yet in Nadia attack case

Physicians advise knee surgery for her

Hasanul Banna 

""""""""""""The police failed to make any headway in the case of ETV reporter Nadia Sharmin being attacked at a rally of Hefajat-e-Islam in Dhaka on April 6. Physicians suggested a knee arthroscopy for Nadia, who was covering the programme when she was attacked.
The police said that they were still working with video footage and other materials they had received from the the victim and were trying to collect relevant materials from other media houses.
The investigation officer of the case, Sohel Rana, said that they could make no headway in the case.
He also said, ‘We are working with the video footage and related photographs to identify the attackers, who are clearly seen in the video but as the participants in the rally came to Dhaka from all the districts, it has not yet been possible to identify them.’
Shahbagh police inspector (investigation) MA Jalil told New Age that he had been on leave for 10 days but there was no progress in the case till the time he had been on duty.
No one has as yet been arrested in this connection and the investigation was going on, Sohel said.
Physicians, meanwhile, suggested Nadia to have an arthroscopic surgery in the knee as she stands the risk of being paralysed.
Nadia’s family expressed dissatisfaction about the matter. Her elder sister Sadia Afrin, who is a lawyer, told New Age that since the filing of the case, the police had not even contacted the family.
‘We are now busy with Nadia’s surgery. We have provided the police with the video footage. We do not know what is now going on,’ she said.
Nadia said, ‘The police could arrest criminals after examining low-resolution video footage of the Fatikchari incident. But I do not understand why cannot they do it examining high-resolution video footage.’
‘I think the authorities concerned are no sincere enough in this regard,’ she added.
Rights activist Khushi Kabir expressed her concern about no development being made in the case. ‘The attack on Nadia was a clear violation of human rights. The police seem unwilling to investigate the incident and that, too, is a rights violation.’
Ekushey TV reporter Nadia, who was beaten at the Hefajat rally in the Paltan  crossing, was sent to Dhaka Medical College Hospital and was later moved to Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University Hospital. She was discharged from hospital on April 11.
Nadia’s condition is reported to be improving but she cannot walk.
Hefajat activists on the day also attacked several other journalists.
Shahbagh police subinspector Ikftekharul Alam filed the case on April 11 against 60 unnamed Hefajat activists under Section 10 of the Women and Child Repression (Prevention) Act.
The police in the case statement said the the attackers had pelted her with stones and water bottles."""""""""



.....................................................................................................................................
সাংবাদিকতায় নারী ঃ বর্তমান প্রেক্ষাপট
' সা ম নে র পৃ থি বী না রী দে র '
ইয়াসমিন পিউ


""""সাম্প্রতিক সময়ের একটি আলোচিত নাম নাদিয়া শারমিন, যিনি গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন। হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা তাকে শুধু 'নারী' বলেই সমাবেশস্থলে কয়েকদফা বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়; ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদেরকে অবমাননার ইতিহাস এ উপমহাদেশে প্রাচীন। তবে দুঃখজনক এ কারণেই যে, বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে নারীরা যখন সবখানে কৃতিত্বের সঙ্গে জায়গা করে নিচ্ছেন, তখনও অর্থাত্ এই একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মতো ছিল না। মেনে নিতে পারেওনি জাতি। নাদিয়া শারমিনের উপর ঘটে যাওয়া এই বর্বরোচিত ঘটনায় দেশ-বিদেশে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিষয়টি দফায় দফায় আলোচিত হয়েছে দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমেও।

নাদিয়া শারমিনের ভাষ্যঃ 'নাদিয়া শারমিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে দমে যাওয়ার মেয়ে আমি নই; পেছন ফিরে যাওয়ার জন্যে আমার জন্ম হয়নি। হেফাজতের কর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই ঘটনার জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন। তারা বলেছেন যে কতিপয় দুর্বৃত্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। নাদিয়া শারমিন বলেন, বিষয়টা যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে হেফাজতের কর্মীরা কেন সেই দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের দাবি চেয়ে, বিচার চাইছে না? তাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে একজন নারীর গায়ে হাত তোলার জন্যে সেই দুর্বৃত্তদের বিচার হওয়া কী উচিত নয়? তিনি আরো বলেন, একজন নারীকে ৫০-৬০ জন পুরুষ লাঞ্ছিত করলো, আর সমাবেশের লাখো কর্মীর মধ্যে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালো না! তারা যদি একজন নারীর নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে দেশের এতো নারীর নিরাপত্তা দিবে কি করে? আর ইসলামকেই বা হেফাজত করবে কি করে? এই প্রশ্ন রেখে নাদিয়া শারমিন বলেন, অনেকে আমার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দয়া করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখুন। সেদিন লম্বা কামিজ আর বড় ভারি কাপড়ের ওড়না পরেও আমি তথাকথিত ধর্মপ্রাণ ওই লোকদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। আমার নানী হাসিনা আশরাফ-এর সময় বলা হতো, 'সালোয়ার কামিজ পরে সাংবাদিকতা করা যাবে না'। ইসলামসহ সব ধর্মে নারীদের যে সম্মান দিয়েছে তা কী এখন হেফাজতে ইসলাম দিতে পারছে? হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে একজন নারীকে অর্ধশত লোক মিলে পিটিয়ে, রাস্তায় ফেলে তার জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলার ইতিহাস কি কোন ধর্মে আছে? তাহলে এসব হেফাজতকারী কোন ধর্মের হেফাজত করতে নেমেছে তা আমার বোধগম্য নয়! হেফাজতকারীরা এসব প্রশ্নের জবাব দেবেন কি? নাদিয়া বলেন, হেফাজতে ইসলামের ক্ষমা চেয়ে লাভ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে,যখন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে আমি যাবো এবং তখন যদি তারা আমাকে স্বসম্মানে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তাহলেই তাদের ক্ষমা গ্রহণযোগ্য হবে।

নারী সাংবাদিকতার শুরুঃ বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার গোড়াপত্তন করেন নূরজাহান বেগম। যিনি 'বেগম' পত্রিকার সম্পাদক। তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৫ সালের দিকে। নূরজাহান বেগমের পত্রিকার কাজের হাতেখড়ি হয় বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের 'সওগাত' পত্রিকায় বাবাকে সহযোগিতা করার মধ্যদিয়ে। এরপর ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কোলকাতার ১২নং ওয়েলেসলি স্ট্রিটের বাড়িতে প্রথম সাপ্তাহিক 'বেগম' পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তখন বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল, নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। 'বেগম' পত্রিকায় লেখালেখির মধ্যদিয়ে অনেক নারী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাংবাদিকতার কাজে এগিয়ে আসেন। তাদের একজন সাংবাদিক 'দিল মনোয়ারা মনু'। যার শুরুটা হয়েছিল সত্তরের দশকে। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন 'বেগম' পত্রিকায় লেখালেখির কাজ শুরু করি, এরপর 'বাংলার বাণী' পত্রিকায়। কাজ করতে গিয়ে যেটা দেখেছি, প্রথমত পুরুষরা বিশ্বাস করতে চান না যে, নারীরা ভালো কাজ করতে পারে, তবে ভালো কাজ করে দেখাতে পারলে অবশ্য পুরুষরা সহযোগিতা করেছে। এ বিষয়টি শুধু যে পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়; এটা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়ে ধাপে ধাপে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে, 'নারীরাও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে'। নারী সাংবাদিকদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছিল বেশি। আমি যখন পাক্ষিক 'অনন্যা'য় কাজ করি, সে সময় পেষ্টিং-এর দিন বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়ে যেত। রাত করে একটা মেয়ে বাড়ি ফিরবে, এটা প্রতিবেশীরা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। আমি বাসায় ফেরার সময় আশপাশের বাড়ির দরজা খোলার শব্দ পেতাম। তারা আমাকে আড়াল থেকে দেখতো, 'একটা মেয়ে মধ্যরাতে চাকরি থেকে বাসায় ফেরে'। সেটা আবার কেমন চাকরি! সবাই ভালো চোখে দেখতো না বিষয়টা। কিন্তু যখন দিন গড়ালো প্রতিবেশীরা জানতে পারলো, আমি আসলে নিয়ম করেই বিশেষ দিনে দেরিতে বাসায় ফিরছি এবং পত্রিকায় 'বাল্য বিবাহ'র কুফল', 'যৌতুক প্রথা'র বিপক্ষে লিখছি, ভালো কাজ করছি, তখন আশপাশের যে লোকজন আড় চোখে দেখতো, তারা আবার সমীহ করতে শুরু করলো। রাতে ফেরার পথে জেগে থাকা পানের দোকানদার ছেলেটিও এগিয়ে আসত সহযোগিতা করতে।'

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুধু নূরজাহান বেগম কিংবা শুরুর দিকের নারী সাংবাদিকরাই নন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে যুগ যুগ ধরে নারীরা তাদের নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে ভালো কাজ দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন সাংবাদিকতা পেশায়। তাদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখা সম্ভব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, সম্প্রতি সময়ে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব নারী সাংবাদিক আহত হয়েছেন তার নিন্দা জানানোর ভাষা আসলে আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আসলে নারীদের ঘরে বসিয়ে রাখার পক্ষে নন। তবে হেফাজতের ভূমিকাটি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। তারা মঞ্চে ঘোষণা দিয়েই বলেছে, নারীনীতি, শিক্ষানীতি, নারীদের অবাধ বিচরণ, এসব বিষয়ে কাজ করবে না। নারীকে যদি মানুষ হিসেবে না দেখে কেবল নারী হিসেবেই দেখা হয়, তাহলে অবাধ বিচরণের কথা আসে না। হেফাজত শুধু নারীর ক্ষেত্রে 'ব্যভিচার', 'বেহায়াপনা' এসব কুরুচিপূর্ণ শব্দ একই ক্লোজের মধ্যে যখন জুড়ে দেন, তখন স্পষ্টতই বোঝা যায় যে এই শক্তিটি আসলে নারীদের ঘরে আটকিয়ে রাখার পক্ষে। আর তাদের এসব ঘোষণার পরও যদি নারী বাইরে কাজ করতে আসে তাহলে তাদের পরিণতি কী হবে তা তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, নাদিয়া শারমিনসহ নারী সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করে। তিনি বলেন, নারীদের বাইরের কাজে বাধা দিতেই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু নারীরা দীর্ঘদিন ধরে যে যোগ্যতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে তাতে আঘাত করে তাদের কোনভাবেই দমানো সম্ভব নয়। নাদিয়া শারমিনের ওপর হেফাজতের এই আঘাত বুমেরাং হয়ে ফিরবে। তিনি বলেন, মেয়েদের ভয়ের কিছু নেই, হারাবারও কিছু নেই, সামনের পৃথিবী নারীদের।"""http://ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDRfMjJfMTNfNF8zN18xXzM1MjEz


......................................................................................................................................................

' সমস্যা আসলে ধর্মে না মানসিকতায় '
লাজিনা জ্যাসলিন

""""গত বিশ বছরে আমাদের দেশে শিক্ষায় যেমন নারী এগিয়ে এসেছে অনেকটা পথ তেমনি কর্মক্ষেত্রেও নারীর পদচারণা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার গুরুত্ব অনেক বেশি। নারী পুরুষের কাজের সীমানা পার হয়ে নিজের প্যাশনের জায়গা থেকে সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসছেন অনেক নারী। কিন্তু চলতি মাসের ৬ তারিখে রচিত হয় এক কালো অধ্যায়। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন। এহেন পৈশাচিক ঘটনায় পুরো দেশ ক্ষুব্ধ। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নতুন করে। এই নিয়ে বিশিষ্টজনরা তাদের অভিমত দিয়েছেন। প্রতিবেদনটি লিখেছেন—

লাজিনা জ্যাসলিন

হামিদা হোসেন

চেয়ারপার্সন, আইন ও শালিসকেন্দ্র

নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলা অবশ্যই একটি জঘন্য অপরাধ। কোন অপরাধ কারা করছে, কোন সংগঠন করছে তার প্রমাণ পাওয়া গেলে ক্রিমিনাল কেইস করা যায়। ঘটনা প্রমাণে মিডিয়ারও একটা দায়বদ্ধতা থেকে যায়। তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ভিকটিমকে আইনগত সহায়তা আমরা করে থাকি। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হয়। সমাজে নারী নিজের কর্মদক্ষ্যতা ও যোগ্যতার বলে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চলেছে। এই অবদান আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। আর নারীর এই ক্রম অগ্রগতিই যেন পুরুষদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে। গণমাধ্যমে নারী সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। একজন সাংবাদিক নারী পুরুষের মতো করেই কাজ করে। এখানে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। সাংবাদিক নাদিয়ার ওপর হাত তোলা তাই প্রমাণ করে। এ ঘটনা ধর্মের নামে নারী নির্যাতন প্রকাশ করেছে। ধর্মের নামে যারা উচ্ছৃঙ্খলতা করে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ ধর্মে নারীকে সম্মান ও মর্যাদার আসন দিয়েছে।

==

নাদিয়া শারমিন

স্টাফ রিপোর্টার, ইটিভি

নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আসলে কখনোই রক্ষিত হয়নি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নারীর অবস্থান শক্ত হয়নি এখনো। চেষ্টা চলছে তবে এখনো অনেকটা পথ বাকী। যতদিন না পর্যন্ত সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, নারীরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে নিজেকে প্রমাণে ততদিন এই সমস্যা থাকবেই। সমস্যা আসলে ধর্মে না মানসিকতায়। তাই নারী এখনো ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের হুমকির মুখে। তবে এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার না হলে এই অপচর্চা চলতেই থাকবে। যা থেকে স্বয়ং আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী কারো পরিত্রাণ নেই। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন তা হলো এসব নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা। জানা গেছে, সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দুইটি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। এগুলো থেকে খুব সহজেই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব।

==

রহুল আমিন গাজী

প্রেসিডেন্ট

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন

আমরা শুধু নারী নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর হামলার বিরুদ্ধে। এজন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের কাছে একাধিক আবেদনও পাঠিয়েছি। কিন্তু সেগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে না। সাংবাদিক নাদিয়াসহ আরো যেসব সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হতাহতের শিকার হয়েছেন এবং সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ অতীতে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।

==

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল

সাবেক মহাসচিব

বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন

সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা আমাদের উপমহাদেশে চর্চিত বিষয়। তবে বর্তমানে সাংবাদিক নারীর উপরও আঘাত আসায় তা আমাদের নজরে গুরুত্ব সহকারে উঠে আসছে। আমাদের উপর আসা সকল আক্রমণ, হত্যা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব, প্রতিবাদ জানাব। আশা করবো সরকার এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

==

তাসমিমা হোসেন

সম্পাদক, পাক্ষিক অনন্যা

একজন নারী সাংবাদিকের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে আমরা হেফাজতে ইসলামের এক নির্লজ্জ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলাম। নারী নির্যাতনের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। ধর্মের নামে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে প্রথম ধাক্কাটি যে বার বার সহ্য করতে হয়েছে এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীটিকেই। সেই খেলাতেই মাততে চাইছিলো হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনটিও। একজন নারীকে আহত করে তারা আবারো বুঝিয়ে দিতে চাইছে 'নারী তুমি দুর্বল, তুমি ভীত- আবার ফিরে যাও ঘরে'। এই আক্রমণটা আসলে পুরো নারী সমাজকে সতর্ক করে।

===

শাহনাজ বেগম

বিশেষ প্রতিনিধি, দ্যা ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট

সাংবাদিকতা পেশা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক সব ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই যারা এই পেশায় আসতে আগ্রহী তাদের এই বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই আসতে হবে। ইটিভির সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা যে আঘাত হেনেছে, সেটি শুধু একজন সাংবাদিক নয় পুরো মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। এটুকু বলতে পারি আমাদের সমাজ নারীর মর্যাদা দেয়। নারীবান্ধব প্রচুর আইনও রয়েছে।

==

নাদীরা কিরণ

এ্যাসিস্টেন্ট চিফ রিপোর্টার, এটিএন বাংলা

স্বাধীনতার ৪২ বছরেও আমাদের দেশে নারীকে সম্মান করা, সব কাজে সমানভাবে দেখা এবং নারীর কষ্টার্জিত অবস্থানকে মেনে নেয়ার জন্য সমাজ এখনো প্রস্তুত হতে পারেনি। নাদীয়া শারমিনের উপর এই আঘতের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, এটা শুধু নাদিয়াকে আঘাত করা না, সমগ্র জাতিকে আঘাত করা। ধর্মান্ধতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপকভাবে বিস্তর লাভ করেছে। কোনো সরকার তা প্রতিরোধ করার প্রয়োজন বোধ করেনি। এই অবস্থায় সাংবাদিকদের সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।""""http://ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDRfMjJfMTNfNF8zN18xXzM1MjE2


.................................................................................................................................................

ETV JOURNO NADIA ATTACK CASE

Police fails to make any headway

Hasanul Banna 

""""""The police could make no headway in the case in which ETV reporter Nadia Sharmin came under attack while covering a rally of Hifazat-e-Islam in Dhaka on April 6.
Police said they were still working on video footages and other materials.
The case investigation officer, Sohel Rana, admitted no headway could be made in the case.
He also said, ‘We are working on it with video footages and the related photographs to identify the attackers, but it would take time as the participants of the rally came from all the districts.’
Shahabag police inspector (investigation) MA Jalil told New Age that none was arrested in this connection and that the investigation was going on.
Nadia’s family expre-ssed dissatisfaction on the issue.
Nadia’s elder sister, lawyer Sadia Afrin told New Age that since filing the case, police did not even contact the family.
She said that the family provided the police with all evidences –the video footages.
She said that the family was not aware as to what’s going on.
Ekushey TV reporter Nadia Sharmin was beaten up and injured while covering Hifazats’s rally at Paltan intersection on April 6.
Hefazat activists also attacked several other journalists on the day.
Nadia was rushed to Dhaka Medical College Hospital for treatment and later shifted to Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University Hospital.
She was released from the hospital on April 11.
Nadia’s condition is improving but she she is unable to walk due to injuries in her knees.
Shahabag police sub inspector Ikftekharul Alam filed a case April 11 accusing 60 unnamed activists of Hefazat under the section 10 of women and child repression prevention act in this connection.
Police, in the case statement, said the assaulters threw brickbats and water bottles on her leaving her seriously injured.""" http://newagebd.com/detail.php?date=2013-04-21&nid=46783#.UXUVrKIwpOA


......................................................................................................................................................

এই লাঞ্ছনা ও অপমানের বিচার চাই

মিথিলা ফারজানা | তারিখ: ২১-০৪-২০১৩

""কলেজে ভর্তির ফরম পূরণের সময় লিখতে হয়েছিল, বড় হয়ে কী হতে চাই। লিখেছিলাম, ‘ওরিয়ানা ফ্যালাসির মতো সাংবাদিক হতে চাই।’ বিজ্ঞানে পড়া, মোটামুটি ভালো ছাত্রীর এ রকম ইচ্ছা দেখে যেসব প্রশ্ন আসতে থাকল, তাতে মনে হলো, আমি সাংবাদিক নয়, তেলাপোকা হতে চেয়েছি। গত এক যুগে দেশের গণমাধ্যম আর সাংবাদিকতার জগতে এমন এক পরিবর্তন এসেছে যে সেসব প্রশ্নের উত্তরে আমাকে নতুন করে আর তেমন কিছু বলতে হয়নি।
গত কয়েক দিন ধরে নিজেকে হঠাৎ করে আবার তেলাপোকাই মনে হচ্ছে। তাড়া খাওয়া সেই তেলাপোকা, ক্ষুদ্র অসহায় এক কীট, আমাকে ঘিরে কতগুলো প্রাণী উল্লাস করছে। ধেয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বাঁচার জন্য অসহায় আমি জোরে জোরে পা ফেলছি। সামনে এগিয়ে আসছে কয়েকজন, মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে, খালি বোতল দিয়ে ইচ্ছামতো বাড়ি দিচ্ছে যেখানে-সেখানে। চারদিকে তাকাচ্ছি, বাঁচানোর কেউ নেই, কেউ এগিয়ে আসছে না। প্রাণীগুলোর মধ্যে দু-চারজন ঘিরে ধরেছে আমাকে, ঘুষি মারছে, রাস্তায় ফেলে পিষে মারতে চাইছে, তেলাপোকাই তো!
নাদিয়া শারমিন সাংবাদিক। বাংলাদেশে যে ৩০টির মতো টিভি চ্যানেলে বহু সাংবাদিক সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন, তার মধ্যে তিনি একজন। ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও ধারণা করতে পারি, কখনো দিনে, কখনো রাতে, কখনো ডেস্কে কাজ করেন তিনি। ২০০০ সাল থেকে টিভিতে কাজ করছি, কখনো শুনিনি বা দেখিনি কোনো রিপোর্টার ছেলে না-মেয়ে, সেটি চিন্তা করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে বা রিপোর্টার নিজেও কাজ করার সময় তাঁর নারী পরিচয় নিয়ে দ্বিধা করছেন। আগুন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আন্তর্জাতিক সম্মেলন—কোথায় গিয়ে মেয়েরা সাংবাদিকতা করেননি, মনে করতে পারি না। বাংলাদেশের মতো সরগরম রাজনীতির দেশে রাজনৈতিক সমাবেশ কাভার করা তো মামুলি ব্যাপার। জানি না, সেদিন তেমন ভেবেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কি না নাদিয়া। তবে আমি নিশ্চিত, তিনি জানতেন না, কী অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য, আমাদের সবার জন্য।
৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নাদিয়া শারমিনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এটুকু শুনেছিলাম ৬ এপ্রিল রাতেই, এরপর কিছু খণ্ড খণ্ড বর্ণনা নাদিয়ার সাক্ষাৎকারে। আমার শ্রদ্ধেয় স্যার সাখাওয়াত আলী খানকে বলছি, জি স্যার, সেই ঘটনার ভিডিও ঘুরছে ইন্টারনেটে, দেখানো হচ্ছে টিভিতে। আপনি আপনার লেখায় ঠিকই অনুমান করেছেন, কারও না কারও কাছে এর ভিডিও ছিল। কী ঘটেছিল সেদিন, নাদিয়ার সঙ্গে দেখতে পাচ্ছে সবাই।
কিন্তু এ তো লাঞ্ছনা নয়, একে তো লাঞ্ছনা বলে না। জানি না একে কী বলে, তবে আমি নিশ্চিত, যাঁরা সেদিনের এই ভিডিও দেখেছেন, তাঁরা বুঝবেন, ‘নারী’ থেকে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার এই নিরন্তর সংগ্রামকে মূল-কাণ্ডসহ উপড়ে ফেলতে চাইছে এই লোকগুলো। কী অপার সাহসে হাজারো পুলিশের বেষ্টনীতে থাকা অবস্থায় একটি মেয়ের শিক্ষা, দক্ষতা, পেশাদারি—সবকিছু ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে তাঁর নারী পরিচয়কে একমাত্র পরিচয় করে তুলে একদল ইতর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তাঁকে অপমান করে!
‘মেয়ে হয়ে কেন এই পুরুষের সমাবেশে আসলি?’ ‘কেন মাথায় কাপড় নাই’—এসব প্রশ্নের উত্তর আজকে আমাকেও দিতে হবে, দিতেই হবে আপনাকেও। আজকে নারী সাংবাদিককে দিতে হচ্ছে, কাল চিকিৎসককে দিতে হবে, পুলিশকে দিতে হবে, বিজ্ঞানীকে দিতে হবে। উত্তরটা ভেবে রাখুন, সব পেশাজীবী নারী। আর উত্তর না দিতে পারলে যে কেউ, সে একজন রিকশাওয়ালা হোক, দিনমজুর হোক, স্কুল পাস হোক আর নিরক্ষর হোক—আপনাকে চাইলে রাস্তায় ফেলে পেটাতে পারে।
মানতে পারছি না, মানতে পারছি না এই অপমান। সাংবাদিক অগ্রজেরা, নারীনেত্রীরা, মানবাধিকারকর্মীরা, যাঁরা শাহবাগে আওয়াজ তুলেছেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের সেই অনুজেরা, সবাইকে বলছি এর নিষ্পত্তি জরুরি, তা না হলে এখন আমাদের যেমন ৪২ বছর ধরে অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তেমনি আরও অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের তৈরি হবে। আবারও পেছনের হিসাব মেলাতে বসতে হবে আমাদের।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি একটি সাক্ষাৎকারে হেফাজতের এক নেতাকে বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আপনি বোরকা পরে ঘরে বসে থাকুন, মেয়েদের নিরাপদে বাইরে কাজ করতে দিন।’ এত বিপ্লব আমরা চাই না। শুধু এর বিচার করুন। সবার ছবি আছে, সবাইকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ধরুন এদের সবাইকে। জানান দিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িক নারী-পুরুষের সমান অধিকারের এই দেশে এরা ভয়ংকর অপরাধী হিসেবে বিবেচিত।
এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কোনো ছোটখাটো অঘটন নয়, অনেক বড় অঘটনের শুরু। সেটা মাথায় রেখেই দয়া করে এর সুরাহা করুন, অমীমাংসিত রেখে দেবেন না একে আরও অনেক কিছুর মতো। বহু যুদ্ধের পর মেয়েরাই তাদের কাজের জায়গাটি তৈরি করে নেয়, এটি কুড়িয়ে পাওয়া কোনো ফল নয়, কয়েকজন ভণ্ডের তাণ্ডবে একে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না কিছুতেই।
মিথিলা ফারজানা: গণমাধ্যমকর্মী। "" http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-21/news/346410


...........................................................................................................................................


http://www.newagebd.com/detail.php?date=2013-04-07&nid=45366#.UWkuhqIwpOA

http://banglanews24.com/English/detailsnews.php?nssl=51921f74bdae59a0571140fc4da87093&nttl=1204201367727

http://www.daily-sun.com/details_yes_12-04-2013_60-sued-for-attack-on-Journo-Nadia_466_1_0_3_23.html

http://www.firstpost.com/topic/place/bangladesh-hefajat-e-islam-bangladesh-supporter-attacked-on-ekushey-tv-video-h3llRVKBf8s-1247-1.html

http://www.cpj.org/tags/ekushey-television

http://www.totalnewsbd.com/2013/04/06/media-harassed-women-reporters-attacked-by-mullahs/

http://www.thedailystar.net/beta2/news/attacks-on-journos-condemned/

http://siawi.org/article5442.html

http://mediainbangladesh.blogspot.com/2013/04/five-journalists-were-injured-in.html

http://ns.bdnews24.com/details.php?id=242788&cid=2

http://www.daily-sun.com/index.php?view=details&archiev=yes&arch_date=08-04-2013&type=Attack-on-female-TV-reporter&pub_no=462&cat_id=1&menu_id=5&news_type_id=1&index=2

http://www.frequency.com/video/hefajat-e-islam-bangladesh-supporter/89281348/-/5-166